অমর্ত্য সেনের বাড়ি বাঁচাতে মঞ্চে সুমন, শুভাপ্রসন্নরা
৪ মে ২০২৩মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহাকেও অমর্ত্যের বাড়ি প্রতীচীর সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ করতে বলেছেন।
তবে নিজেদের অবস্থানে অনড় বিশ্বভারতীও। তারাও জানিয়ে দিয়েছে, চাপের কাছে নতিস্বীকার করবে না।
বিতর্কে 'প্রতীচী'
বীরভূমে বোলপুরে অমর্ত্য সেনের বাড়ি প্রতীচী। সেখানে সেন পরিবারের বাস বহু দশকের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবদ্দশাতে সেখানে থাকতেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের পূর্বপুরুষরা।
এই বাড়ি এখন বিতর্কের কেন্দ্রে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, সেন পরিবার বেআইনিভাবে ১৩ ডেসিমাল জায়গা দখল করে রেখেছে। এই জায়গা নোবেলজয়ীকে ছেড়ে দিতে হবে।
অনেকদিন ধরেই এই বিতর্ক চলছে। তার মাত্রা অনেকটা বেড়েছে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী উপাচার্য হওয়ার পর। এ নিয়ে আইনি লড়াই চলছিল। এবার বিশ্ববিদ্যালয় উচ্ছেদের নোটিস সেঁটে দিয়েছে প্রতীচীর মূল ফটকের বাইরে।
জমি দখলের অভিযোগ
বিশ্বভারতীর বক্তব্য, আশুতোষ সেন সওয়া একর জমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়েছিলেন। কিন্তু তার পুত্র অমর্ত্য সেন থাকেন ১.৩৮ একরে। এই ১৩ ডেসিমাল জমি নিয়ে বিবাদ গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। উচ্ছেদ নোটিসের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন অমর্ত্যের আইনজীবী।
১৯ এপ্রিল দেয়া এই নোটিসে বলা হয়েছে, দুই সপ্তাহের মধ্যে দখল করা এলাকা অর্থাৎ প্রতীচীর উত্তর-পশ্চিম কোণের জমি ছেড়ে দিতে হবে অমর্ত্য সেনকে। সেই অর্থে ৬ মে নোটিসের সময়সীমা শেষ হচ্ছে।
এই বিতর্কে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নোবেলজয়ীর পাশে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে প্রতীচীতে গিয়ে তার হাতে জমি সংক্রান্ত নথি তুলে দেন গত ৩০ জানুযারি। যদিও এই নথি বিশ্বভারতী খারিজ করে দিয়েছে।
উচ্ছেদের নোটিসের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, তিনি জেলার তৃণমূল বিধায়ক ও মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহাকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রতীচী রক্ষা করতে। বুলডোজার চালানো হলে তিনি নিজে বাধা দেবেন, এমনটাই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
উচ্ছেদ নোটিসের প্রতিবাদ
উচ্ছেদের বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনেরা সামিল হচ্ছেন প্রতিবাদে। বিশ্বভারতী বাঁচাও কমিটির ডাকে। অমর্ত্য সেনের বাড়ির সামনে গড়ে উঠছে ধরনা মঞ্চ। সেখানে থাকবেন চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন, চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ, সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমন প্রমুখ। মঞ্চে শোনা যাবে সুমনের গান।
শুভাপ্রসন্ন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "অমর্ত্য সেনকে হেনস্থার প্রতিবাদ জানাতে আমরা যাব। বোলপুরে অবস্থান, ধরনা হবে ৫ মে।"
গত সপ্তাহে নন্দনে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনেরা প্রতিবাদ সভা করেন। ছিলেন নাট্যকার রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, দেবশঙ্কর হালদার, গৌতম হালদার, শিক্ষাবিদ সৌরীন ভট্টাচার্য, সাবেক অধ্যাপক অমিয় দেব থেকে সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী।
অমর্ত্য সেন বরাবরই বিজেপি সরকারের সমালোচক। বিশ্বভারতীর জমি সংক্রান্ত তৎপরতাকে অনেকে তার সঙ্গে জুড়ে দেখছেন। নোবেলজয়ীর ছাত্র, দেশের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৌশিক বসুর টুইট, "অমর্ত্যের সমালোচনার জন্যই যে বিশ্বভারতী এ কাজে নেমেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এটা ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষে লজ্জার।"
রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, "উপাচার্য হিজ মাস্টার্স ভয়েস অনুযায়ী কাজ করছেন। শুধু অমর্ত্য সেন নয়, সবার সম্মানের স্বার্থে প্রতিবাদ করতে হবে।" স্বপ্নময় ডয়চে ভেলেকে বলেন, "জমি একটা অজুহাত। উপাচার্য জনসমক্ষে যেটা করছেন, সেটা আমাদের খারাপ লাগছে।"
বিশ্বভারতীর সওয়াল
বিশ্বভারতী তাদের নিজ অবস্থানে অনড়। উপাচার্যের বক্তব্য, "বিশ্বভারতীর জমি এক হাজার ১৩৪ একর। উপাচার্য হিসেবে যোগ দিযে দেখলাম, ৭৭ একর জমি বেদখল হয়ে রয়েছে। বাঙালি সমাজের রুই-কাতলাদের হাতে জমি আছে। সবাইকে জমির ব্যাপারে চিঠি দেয়া হয়েছে।"
কেন্দ্রের চাপের কথা খারিজ করে দিয়েছেন উপাচার্য। তার বক্তব্য, "বাইরের কোনো শক্তির প্রভাব নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে এটা আমার নৈতিক দায়িত্ব। আমি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষা করছি।"
নোবেলজয়ীর প্রসঙ্গে তার প্রতিক্রিয়া, "অমর্ত্য সেনকে অশ্রদ্ধা করতে চায় না বিশ্বভারতী। যারা প্রতিবাদ করছেন তারা এসে দেখুন আমি মিথ্যা বলছি কি না। আর মুখ্যমন্ত্রী একপক্ষের কথা শুনে যে নথি দিয়েছেন, তা ১৯৪৩ সালের। ওই নথির কোনো গুরুত্ব নেই।"
শেষপর্যন্ত কি আদালতেই এর ফয়সালা হবে?