পরিবেশ ছাড়পত্রহীন ইটভাটা
২০ মার্চ ২০১৩পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের মতে, লোকবলের অভাবে নজরদারি সম্ভব নয়৷
ঢাকার অদূরে সাভার আর ধামরাই উপজেলার রাস্তার দু'পাশে যতদূর চোখ যায়, শুধু ইটের ভাটা৷ এসব ইটের ভাটায় কয়লার পাশাপাশি কাঠও পোড়ানো হয়৷ অথচ কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ৷ ফসলি জমিতে লোকালয়ে এসব ইটভাটার চিমনির উচ্চতা কোনোটিরই ৬০ ফুটের বেশি নয়৷ অথচ চিমনি থাকতে হবে ১২০ ফুট৷ স্থানীয় লোকজন জানান, ইটের ভাটার চিমনি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় তারা অতিষ্ঠ৷ এমনকি আশপাশের গাছ মরে যাচ্ছে৷ গাছের পাতা শুকিয়ে ঝরে পড়ে৷ সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোশাররফ হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানান, ইটের ভাটার কারণে এই অঞ্চলের মানুষ শ্বাসকষ্ট ও চোখের রোগে বেশি আক্রান্ত হন৷
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসেবে সারা দেশে কমপক্ষে ২০ হাজার ইটভাটা আছে৷ আর সেই তালিকা দেখলে দেখা যাবে এর অর্ধেকই অবৈধ৷ অধিকাংশেরই নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র৷ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গোলাম রব্বানী ডয়চে ভেলেকে জানান, ইটভাটা স্থাপনের অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন৷ এই অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক হলেও অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ম মানা হয়না৷
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সমন্বয়কারী স্থপতি ড. ইকবাল হাবিব ডয়চে ভেলেকে জানান, তাঁরা গবেষণায় দেখেছেন, ইটভাটা মাটি, পানি এবং জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি করছে৷ ইটভাটার ধোঁয়ায় যে কার্বন মনোক্সাইড থাকে তা বাতাসকে যেমন দূষিত করে, তেমনি গাছপালা এবং ফসলের ক্ষতি করে৷ ইটভাটার বর্জ্যে যে সালফার থাকে তা নদী বা জলাশয়কে দূষিত করে৷ এর ফলে আশপাশের নদী থেকে মাছসহ সবধরণের জলজ প্রাণী এবং উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে যায়৷ ইটভাটার আগুনের প্রচণ্ড তাপে ইটভাটা এবং আশপাশের ফসলি জমি নিষ্ফলা হয়ে যায়৷ এমনকি পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ও এখন ইটভাটার কারণে ঝুঁকির মুখে রয়েছে৷ আর ইট ভাটার কারণে বাতাস দূষিত হওয়ায় মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হয়৷
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও স্বীকার করেন, ইটভাটার কারণে পরিবেশ দূষণ, ভূমির উর্বরতা হ্রাস ও বন উজাড় হচ্ছে৷ এ কারণে তারা এখন আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির ইটভাটার দিকে ঝুঁকছেন৷ এজন্য একটি বিধিমালাও তৈরি হয়েছে৷ তাঁরা চান প্রচলিত ইটভাটা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দিতে৷ আর তারা মনিটরিং আরো জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দেন৷